শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব মোতাহের হোসেন চৌধুরী,পর্ব-০১ SSC
এসএসসি বাংলা-২০২২ শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব মোতাহের হোসেন চৌধুরী বহুনির্বাচনি সৃজনশীল ১নং প্রশ্নের উত্তর y১নং প্রশ্ন বিএ পাস করার পর আজিজ সাহেব একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি নেন। অবৈধ রোজগারে অল্পসময়ে তিনি বাড়ি গাড়ির মালিক হয়ে যান। অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য। অপরদিকে, জাহিদ সাহেবের স্ত্রী সুযোগ বুঝে টাকা-পয়সা কামিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিলে তিনি বলেন, “অর্থ সম্পদ মানুষকে সুখ দিতে পারে না; বরং ধ্বংস ডেকে আনে।" ক. শিক্ষার আসল কাজ কী? খ. 'অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি'- বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন? গ. উদ্দীপকে জাহিদ সাহেব তার স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণ 'শিক্ষ ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকের আজিজ সাহেবের মানসিকতার পরিবর্তনই 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ক-নং প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার আসল কাজ মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। খ-নং প্রশ্নের উত্তর ● 'অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি' বলতে লেখক মূলত জীবসত্তার চাহিদা মেটাতে মানবসত্তা বিসর্জন দিয়ে অর্থচিন্তায় মগ্ন হওয়াকে বুঝিয়েছেন। ● শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য মূল্যবোধ সৃষ্টি করে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা। কিন্তু বর্তমানে অর্থসাধনাই মানুষের মূল লক্ষ্য। হয়ে উঠেছে। শিক্ষাকে তারা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছে। মানুষ কেবল অন্ন-বস্ত্রের চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তারা প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারছে না। মানবসত্তার সুষ্ঠু বিকাশে যেমন অর্থের প্রয়োজন আছে, তেমনই প্রয়োজন আছে সেই শিক্ষার, যে শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে না। তারা কেবল অর্থ উপার্জনের পেছনেই ছুটে চলেছে। এ কথা বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। গ-নং প্রশ্নের উত্তর ● উদ্দীপকে জাহিদ সাহেব তার স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণ “শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারা এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি হওয়া। ● শিক্ষা মানুষের মূল্যবোধ তৈরি করে। যারা শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারে তারা সমাজের জন্য ভালো কাজ করেন। তারা আলোকিত মানুষ। অন্নবস্ত্রের বাইরেও তারা আরও অনেক বিষয়ে চিন্তা করতে পারেন। তারা শিক্ষাকে শুধু অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার মনে করেন না। ● 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধে লেখক শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এখানে শিক্ষার প্রয়োজনের দিকের সঙ্গে সঙ্গে অপ্রয়োজনের দিকও তুলে ধরেছেন। তিনি অপ্রয়োজনের দিকটির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ এই দিকটিই মানুষকে আনন্দ পেতে শেখায়, মানুষকে সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায়, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে মানুষকে অর্থচিন্তার নিগড় থেকে মুক্তি দেয়, যা উদ্দীপকের জাহিদ সাহেবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই তিনি স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হননি এবং স্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পেরেছেন। কারণ তিনি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত। তার মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়েছে। ঘ-নং প্রশ্নের উত্তর ● "উদ্দীপকের আজিজ সাহেবের মানসিকতার পরিবর্তনই 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধের মূল উদ্দশ্য”- মন্তব্যটি যথার্থ। ● শিক্ষা মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। মানুষকে অন্ধকার পথ থেকে মুক্তি দেয়। মানুষের সৃজনশীলতা মানবসত্তার বিকাশ ঘটায়। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। ● 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধে লেখক মানুষের জীবসত্তা ও মানবসত্তার সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে শিক্ষার ফলে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলে অন্ন-বস্তু সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে ওঠে। সঠিকভাবে শিক্ষা দ্বারা অর্থচিন্তায় ব্যস্ত মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জনে সক্ষম হয়। লেখক মানবজীবনে মনুষ্যত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গুরুত্ব নির্দেশ করেছেন। আত্মাকে বাঁচাতে হলে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। লেফাফাদুরস্তির মতো নয়, সঠিক শিক্ষা প্রয়োজন। উদ্দীপকের আজিজ সাহেবের মধ্যে শিক্ষার এসব দিক অনুপস্থিত। ফলে তার মানসিক বিকাশ প্রকৃত শিক্ষা অনুসারে হয়নি। আর এ কারণেই তিনি অবৈধভাবে রোজগারে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি একজন মানুষ। ● 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধের মূল বক্তব্য হলো শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি করা, মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটানো। মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি হয়নি বলেই আজিজ সাহেব অসদুপায় অবলম্বন করেছেন। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধ সৃষ্টি করে মানুষকে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন যা আজিজ সাহেবের মানসিকতা পরিবর্তনে একান্ত কার্যকর হবে। কারণ মূল্যবোধ সৃষ্টি হলেই তার মানসিকতা পরিবর্তিত হবে। এসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
কোন মন্তব্য নেই